সর্বসমতা ও সদৃশতা

সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - গণিত - | NCTB BOOK
2

সর্বসমতা ও সদৃশতা

আমরা চারদিকে বিভিন্ন আকৃতি (Shape) ও আকারের (Size) বস্তু দেখতে পাই। কিছু চলো আমরা কিছু বস্তু তুলনা করে দেখি।

তোমরা উপরের ছক থেকে বুঝতে পারছ যে কিছু জিনিস দেখতে হুবুহু সমান, আবার কিছু দেখতে একই রকম, কিন্তু সমান নয়। যেমন আম গাছের যে দুইটি পাতা তুলনা করবে তারা দেখতে একই রকম হলেও আকারে তাদের ভিন্নতা রয়েছে। আবার তোমাদের যেকোনো দুইজনের গণিত বই সবদিক থেকেই একই রকম। জ্যামিতিক আকৃতিগুলোর ক্ষেত্রেও এমন দেখা যায়। দুইটি আকৃতি একেবারে সবদিক থেকে একইরকম হতে পারে আবার একই ধরণের দুইটি আকৃতির আকারে ভিন্নতা থাকতে পারে। এই ধারণাগুলোর খুব সুন্দর নাম রয়েছে, সর্বসমতা ও সদৃশতা। আমরা আর কিছু কাজের মাধ্যমে এই ধারণাগুলোকেই এই অধ্যায়ে বুঝবো।

সর্বসমতা (congruence)

এই মাত্র কিছু জিনিসের যে তুলনা করেছি সেগুলোর মাঝে একটি তুলনা ছিল তোমাদের দুইটি গণিত বইয়ের। তাদের আকার আকৃতি এবং ওজন সবকিছুই মিলে গিয়েছিল। কিছু জ্যামিতিক আকৃতিও এমন সব দিক থেকে মিলে যেতে পারে। দুইটি ত্রিভুজকে যদি আমরা তুলনা করতে চাই, তাহলে দেখবো তাদের তিনটি কোণ এবং তিনটি বাহুই মিলে যায় কি না। এমনভাবে সব দিক যদি মিলে যায় তাহলেই আমরা দুটিকে আকৃতিকে বলবো সর্বসম। সবকিছুই সমান হচ্ছে তাই আমরা সংক্ষেপ করে তাদেরকে সর্বসম বলছি

দুটি জ্যামিতিক আকৃতি সর্বসম কি না তা দেখার জন্য একটি উপায় হচ্ছে তাদের অংশগুলো পরিমাপ করে মিলিয়ে দেখা। যেমন ত্রিভুজের ক্ষেত্রে সবকয়টি কোণ এবং বাহ। আমরা দুইটি জ্যামিতিক আকৃতির চিত্রকে সরাসরি তুলনা করতে পারি একটিকে আরেকটির উপরে রেখে। চলো আমরা একটি খেলার মাধ্যমে সেটির উপায় বের করি।

কাগজের এরোপ্লেন

আমরা সবাই এবারে একটি করে কাগজের এরোপ্লেন বানিয়ে সেগুলো উড়াবো এবং তাদের মাঝে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার আকৃতি খুঁজে বের করবো।

ধাপ ১। প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি করে কাগজ নিয়ে কাগজে কলম দিয়ে একটি চিহ্ন দিয়ে রাখো। তোমরা চিহ্নিত কাগজ দিয়ে প্লেন তৈরি করবে।

ধাপ ২। প্রথমে কাগজটিকে চিত্রের মত করে দৈর্ঘ্য বরাবর সমান ২ অংশে ভাঁজ করো। এবারে ভাঁজ খুললে কাগজের মাঝ বরাবর একটি ভাঁজের দাগ দেখা যাবে। প্রয়োজনে ভাঁজ করার প্রক্রিয়াটি একাধিক বার শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নাও।

ধাপ ৩। এবার চিত্রের মত করে কাগজের উপরের বাম পাশের অংশকে মাঝখানের দাগটির সাথে মিলিয়ে ভাঁজ করো। একইভাবে, উপরের ডান পাশের অংশটিও চিত্রের মত করে ভাঁজ করো।

ধাপ ৪। চিত্রের মত করে আবারো বাম এবং ডান পাশের অংশকে মাঝের দাগ বরাবর মিলিয়ে ভাঁজ করো।

ধাপ ৫। আরো একবার বাম এবং ডান পাশের অংশকে মাঝের দাগ বরাবর ভাঁজ করো। ভাঁজ করার পর কেমন দেখাবে তা চিত্র থেকে মিলিয়ে নাও।

ধাপ ৬। সম্পূর্ণ কাগজটিকে একটু উপরে তুলে দুই হাত দিয়ে ধরো। এবার মাঝ বরাবর নিচের দিকে ভাঁজ করো। তারপর চিত্রের মত করে হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে মাঝের অংশটুকু ধরো।

ধাপ ৭। আমরা এখন প্লেন উড়ানোর প্রতিযোগিতা করবো। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী তোমরা একজন করে প্লেন নিয়ে আসবে এবং নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে প্লেন ছুড়বে। সবাই চেষ্টা করবে নিজেদের প্লেন চিহ্নিত জায়গাটির একদম কাছাকাছি রাখতে। যার প্লেন চিহ্নিত স্থানের সবচেয়ে কাছে গিয়ে পড়বে সে বিজয়ী হবে।

এবারে এসো আমরা প্লেনটির বিভিন্ন অংশের জ্যামিতিক আকৃতিগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখি। ধাপ ৩ পর্যবেক্ষণ করো, সেখানে আমরা দুই অংশের শীর্ষকে ভাঁজ করে পাশের আকৃতিটি পেয়েছিলাম। এখান থেকে তোমরা বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি খুঁজে বের করো। তোমাদের জন্য দুইটি ত্রিভুজ বের করে দেখানো হলো। তাদের বাহু এবং কোণগুলো পরিমাপ করে নিচের ছকটি পূরণ করো।

 

১ম 

বাহু

২য় 

বাহু

৩য় 

বাহু

১ম 

কোণ

২য় 

কোণ

৩য় 

কোণ

বামের 

ত্রিভুজ

 

 

 

 

 

 

ডানের 

ত্রিভুজ

 

 

 

 

 

 

কাজ: এবারে অন্যান্য জ্যামিতিক আকৃতি বের করো এবং তাদের বাহু এবং কোণগুলো পরিমাপ করে নিচের মতো ছক তৈরি করে পূরণ করো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এবারে ধাপ ৪ এ তৈরি হওয়া জ্যামিতিক আকৃতির জন্যেও একইরকমভাবে কোণ এবং বাহু পরিমাপ করে নিচের ছকটি পূরণ করো। উদাহরণ হিসেবে চতুর্ভুজের জন্যে ছক তৈরি করে দেয়া হলো।

 

১ম 

বাহু

২য় 

বাহু

৩য় 

বাহ

৪র্থ 

বাহু

১ম 

কোণ

২য় 

কোণ

৩য় 

কোণ

৪র্থ 

কোণ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অন্যান্য জ্যামিতিক আকৃতির জন্যে নমুনা ছক তৈরি করে দেখানো হলো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এবারে আরেকটি কাগজ নিয়ে প্লেন তৈরির ধাপ ৩ পর্যন্ত আগাও। দুইপাশে উৎপন্ন ত্রিভুজের সমান করে কাগজ কেটে নাও। তারপরে ধাপ ৪ এর মত করে আরেকটি ভাঁজ করো এবং আবারো দুইপাশে উৎপন্ন ত্রিভুজের  আকৃতিকে দুই পাশেই কাগজ কেটে নাও। এবারে এই দুই জোড়া ত্রিভুজেরই একইরকম বাহুগুলোর একটিকে আরেকটির উপরে বসাও। একটি ত্রিভুজকে আরেকটি ত্রিভুজের উপরে সমানভাবে পতন ঘটাচ্ছি আমরা, তাই আমরা এইভাবে মিলিয়ে দেখাকে বলবো সমাপতন (superposition)। একটি ত্রিভুজ আরেকটি ত্রিভুজের উপরে সমাপতিত হয়েছে এক্ষেত্রে। একইভাবে আমরা যেকোনো জ্যামিতিক ক্ষেত্রকেই পরীক্ষা করে দেখতে পারি তারা সমাপতিত হচ্ছে কী না। দুইটি ক্ষেত্র যদি সমাপতন করলে মিলে যায়, তাহলে তারা সর্বসম হবে।

সুবিধাজনক ব্যাপার হলো, দুইটি ত্রিভুজ সর্বসম কিনা তা জানতে আমাদের সবসময় ছয়টি উপাদানই জানতে হবে না। আবার আমাদের ত্রিভুজকে কেটে নিয়ে একটিকে আরেকটির উপরে সমাপতন করেও সবসময় পরীক্ষা করতে হবে না। নির্দিষ্ট কিছু অংশ তুলনা করেই আমরা বলতে পারবো দুইটি ত্রিভুজ সর্বসম কিনা। চলো আমরা দেখি একটি ত্রিভুজ দেয়া থাকলে সবচেয়ে কম কী পরিমাণ তথ্য ব্যবহার করে আমরা আরেকটি সর্বসম ত্রিভুজ আঁকতে পারি। আমরা আসলে এটিকে এভাবেও বলতে পারি যে, সবচেয়ে কম কী পরিমাণ তথ্য দেয়া থাকলে, আমরা একটি নির্দিষ্ট ত্রিভুজই পাবো।

আগের শ্রেণিতে তোমরা চাঁদা, রুলার এবং কম্পাস ব্যবহার করতে শিখেছ নিশ্চয়ই। আমরা এবারে হাতে কলমে বেশ কিছু ত্রিভুজ নিজেরা এঁকে দেখবো কখন কোন তথ্য ব্যবহার করে আমরা একটিই ত্রিভুজ পেতে পারি

কাজ: নিচের তথ্যগুলো ব্যবহার করে তোমরা একটি ত্রিভুজ ABC আঁক, চাঁদা এবং রুলার ব্যবহার করে।

১। ত্রিভুজের BC বাহু ৩ সে.মি. লম্বা।

২। A বিন্দু থেকে BC বাহুর উপরে আঁকা লম্বের দৈর্ঘ্য ২ সে.মি.।

খেয়াল করে দেখো, একেকটি লম্বের অবস্থান একেক ধরনের হবার ফলে একেকটি ত্রিভুজ দেখতে একেক রকম হয়েছে। তোমাদের ক্লাসের সবাই হয়তো আলাদা আলাদা ত্রিভুজ পাবে। অর্থাৎ কেবলমাত্র এই দুইটি তথ্য দিয়ে আমরা একটি নির্দিষ্ট ত্রিভুজ আঁকতে পারছি না।

এবারে ABC ত্রিভুজের জন্য ভিন্ন দুইটি তথ্য দিয়ে চেষ্টা করে দেখা যাক।

১। AB বাহুর দৈর্ঘ্য ৪ সে.মি.। 

২। BC বাহুর দৈর্ঘ্য ৫ সে.মি.।

নিচে তিনটি সম্ভাব্য ত্রিভুজ এঁকে দেখানো হল। তোমরা বিভিন্নজন আরও ভিন্ন ভিন্ন ত্রিভুজ পেতে পারো।

এবারেও তোমরা লক্ষ করলে দেখতে পাবে যে একেকজন একেকধরনের ত্রিভুজ এঁকেছো।

চলো আমরা ভেবে দেখি যে রুলার, কম্পাস আর চাঁদা ব্যবহার করে আমরা কীভাবে একটি নির্দিষ্ট ত্রিভুজ আঁকতে পারি।

আমরা BC বাহুর সমান করে একটি রেখা আঁকতে পারি শুরুতে।

খেয়াল করে দেখো যে, আমরা এখন শুধু A বিন্দুটির অবস্থান বের করলেই ত্রিভুজটি পেয়ে যাবো। এবারে চলো আমরা ভেবে দেখি যে A বিন্দুটির অবস্থান জানতে কী কী তথ্য আমরা জানি।

ক. কোন কোন বাহু আর কোণ আমরা ব্যবহার করবো? 

খ. কতগুলো বাহু আর কোণ আমরা ব্যবহার করবো?

লক্ষ করে দেখো, উপরের কাজগুলোতে আমাদের কোনো কোণের পরিমাপ জানা ছিল না। প্রথমটিতে আমরা শুধু একটি বাহু এবং অপর বিন্দু থেকে লম্ব দূরত্ব জানতাম এবং দ্বিতীয়টিতে আমরা শুধু দুইটি বাহুর পরিমাপ জানতাম।

কাজেই আমরা ABC ত্রিভুজের জন্য তিনটি তথ্য নিয়ে চেষ্টা করে দেখি চলো।

১। AB বাহু ৪ সে.মি.। 

২। BC বাহু ৫ সে.মি.। 

৩। কোণ BCA দেয়া আছে ৪০°

এক্ষেত্রে প্রথমের ৫ সে.মি. বাহুর C বিন্দুতে ৪০° কোণ এঁকে নাও। তারপর রুলার এর শূন্য বিন্দুটি B বিন্দুতে বসিয়ে দেখ ৪ সে.মি. এর সাথে BC ছাড়া অপর বাহুটি কখন মিলে যায়। সেটিই হবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত A বিন্দু

খেয়াল করে দেখো যে এবারেও আমরা একটি নির্দিষ্ট ত্রিভুজ পাইনি, দুইটি ভিন্ন ত্রিভুজ পেয়েছি। তার মানে সবসময় তিনটি তথ্য জানা থাকলেই আমরা সর্বসম ত্রিভুজ আঁকতে পারছি না।

এবারে চলো তিনটি দলে ভাগ হয়ে নিচের তথ্যগুলি দেয়া থাকলে ত্রিভুজ আঁকা যায় কি না তা চেষ্টা করে দেখি।

১ম দলঃ দুইটি বাহু BC = ৫ সে.মি., AB = ৪ সে.মি. এবং তাদের মধ্যবর্তী কোণ ABC=৫০০ নিয়ে দেখি। দলের সবাই BC = ৫ সে.মি., আঁকো। তারপর চাঁদার সাহায্যে B বিন্দুতে কোণ ABC = ৫০০ আঁকো। এরপর রুলার অথবা কম্পাসের সাহায্যে B বিন্দু থেকে BC বাদে অন্য বাহুর উপর ৪ সে.মি. অংশ পরে একটি দাগ দাও। সেই বিন্দুটি হবে A, অর্থাৎ AB = ৪ সে.মি. পেয়ে যাবে।

এবারে A এবং C বিন্দু যোগ করে সবাই AC বাহু, কোণ BAC এবং কোণ BCA পরিমাপ করে আসন্ন মানগুলো নিজের খাতায় লিখো। তারপর দলের বাকিদের সাথে মিলিয়ে দেখো ছবি এবং পরিমাপকৃত আসন্ন মান। দেখবে যে মানগুলো মিলে গেছে। অর্থাৎ সবার ত্রিভুজ সর্বসম।

আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখান থেকে জানতে পারি দুইটি ত্রিভুজের সর্বসমতা সম্পর্কে।

দুইটি ত্রিভুজের যেকোনো দুই বাহু এবং তাদের মধবর্তী কোণ সমান হলে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম হবে।

অর্থাৎ দুইটি বাহু এবং মাঝের কোণ জানা থাকলে আমরা নির্দিষ্ট করে একটি ত্রিভুজ আঁকতে পারবো ।

 ২য় দলঃ তিনটি বাহু BC=৭ সে.মি., AB=৪ সে.মি. এবং CA = ৬ সে.মি. নিয়ে দেখি। দলের সবাই BC = ৭ সে.মি. আঁকো। তারপর কম্পাসের সাহায্যে B বিন্দু থেকে ৪ সে.মি. সমান করে একটি ছোট বৃত্তের অংশ আঁক। তারপর অন্যপাশে C বিন্দু থেকে ৬ সে.মি. সমান করে আরেকটি বৃত্তের অংশ আঁক। তারা দুইজন যে বিন্দুতে ছেদ করবে সেটিকেই আমরা A বলবো।

এবারে A এবং C বিন্দু যোগ করি আর A এবং B বিন্দু যোগ করো। বাহুগুলোর পরিমাপ অনুযায়ী যেহেতু এঁকেছ, সবাই কোণ ABC, কোণ BAC এবং কোণ BCA পরিমাপ করে আসন্ন মানগুলো নিজের খাতায় লিখো। তারপর দলের বাকিদের সাথে মিলিয়ে দেখো ছবি এবং পরিমাপকৃত আসন্ন মান। দেখবে যে মানগুলো মিলে গেছে। অর্থাৎ সবার ত্রিভুজ সর্বসম। আমরা দুইটি ত্রিভুজের সর্বসমতা সম্পর্কে দ্বিতীয় শর্তে চলে এসেছি।

দুইটি ত্রিভুজের তিনটি বাহুই সমান হলে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম হবে।

৩য় দলঃ দুইটি কোণ ABC=৬০°, ACB=৭০০ এবং তাদের মধ্যবর্তী বাহু BC=৬ সে.মি. নিয়ে দেখি। দলের সবাই BC = ৬ সে.মি., আঁকো। তারপর চাঁদার সাহায্যে B বিন্দুতে কোণ ABC = ৬০০ এবং C বিন্দুতে কোণ ACB = ৭০০ আঁকো। দুইটি কোণেরই BC বাদে বাকি যে বাহু থাকবে তারা ছবির মত একটি বিন্দুতে ছেদ করবে। সেই বিন্দুটি হবে A।

এবারে সবাই AC বাহু, AB বাহু এবং কোণ BAC পরিমাপ করে আসন্ন মানগুলো নিজের খাতায় লিখো। তারপর দলের বাকিদের সাথে মিলিয়ে দেখো ছবি এবং পরিমাপকৃত আসন্ন মান। দেখবে যে মানগুলো মিলে গেছে। অর্থাৎ সবার ত্রিভুজ সর্বসম।

আমরা তৃতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখান থেকে জানতে পারি দুইটি ত্রিভুজের সর্বসমতা সম্পর্কে।

দুইটি ত্রিভুজের যেকোনো দুই কোণ এবং কোণ সংলগ্ন বাহু সমান হলে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম হবে।

অর্থাৎ দুইটি কোণ এবং তাদের মাঝের বাহুটিকে জানা থাকলে আমরা নির্দিষ্ট করে একটি ত্রিভুজ আঁকতে পারবো।

চলো আমরা চিন্তা করে দেখি, সর্বসমতার এই বৈশিষ্ট্যগুলো যুক্তিতে ব্যবহার করে আমরা ত্রিভুজের অন্য কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য বের করতে পারি কি না। ত্রিভুজের বাহু ও কোণ নিয়ে কিছু সম্পর্ক দেয়া থাকলে অন্য কোনো সম্পর্ক পাওয়া যাবে কি না তা বের করতে আমরা চেষ্টা করবো দুইটি সর্বসম ত্রিভুজ বের করার।

১। একটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজকে নিচের ছবির মত করে ভাঁজ করো। কী দেখতে পাচ্ছো?

২। নিচের XYZ ত্রিভুজের দুইটি কোন সমান। ত্রিভুজটি কি সমদ্বিবাহু হবে?

উদাহরণঃ একটি ত্রিভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান হলে তাদের বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান হবে।

সমাধানঃ এখানে আমরা চেষ্টা করবো ত্রিভুজকে দুইটি ত্রিভুজে ভাগ করে নিয়ে সর্বসম দেখাতে। তাহলেই কোণ দুইটিকে সমান দেখানো আমাদের জন্য সহজ হবে। ধরে নিচ্ছি চিত্রের মত একটি ত্রিভুজ ABC দেয়া আছে যার AB ও AC বাহুদ্বয় পরস্পর সমান। এবারে আমরা A বিন্দু থেকে BC বাহুর উপরে মধ্যমা অঙ্কন করি যেটি BC বাহুকে D বিন্দুতে ছেদ করে।

এবারে চলো আমরা ত্রিভুজ ABD এবং ত্রিভুজ ACD এর তুলনা করে দেখি। প্রশ্নের শর্তানুসারে বাহু AB এবং বাহু AC পরস্পর সমান। আরেকদিকে খেয়াল করো, AD যেহেতু মধ্যমা, BD = DC। সবশেষে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে AD রেখাংশটি দুইটি ত্রিভুজেই আছে।

যেহেতু দুইটি ত্রিভুজ ABD এবং ACD তে তিনটি করে বাহু পরস্পর সমান, আমরা তাদেরকে সর্বসম বলতে পারি। কাজেই কোণ ACB ও কোণ ABC অবশ্যই পরস্পর সমান হবে।

অতএব আমরা দেখালাম যে একটি ত্রিভুজের দুইটি বাহু সমান হলে তাদের বিপরীত কোণগুলোও পরস্পর সমান হবে। ত্রিভুজের দুই বাহু সমান হলে আমরা তাকে সমদ্বিবাহু (Isosceles) ত্রিভুজ বলি।

সদৃশতা (similarity)

অধ্যায়ের শুরুতে আমরা বিভিন্ন জিনিসের তুলনা করেছি। সেখানে কিছু জিনিসের আকৃতি একই হলেও তাদের আকার একইরকম ছিল না। এমন বস্তুকে আমরা বলি সদৃশ বস্তু। চলো আমরা একটি দলগত কাজের মাধ্যমে দেখি জ্যামিতিক আকৃতি কখন সদৃশ হয়।

দলগত কাজ: দুইটি ভিন্ন মাপের লাঠি, একটি স্কেল, লম্বা সুতা এবং চাঁদা নিয়ে সূর্যের আলো পড়েছে এমন একটি স্থানে ক্লাসের সবাই যাই। লাঠিগুলোর দৈর্ঘ্য শুরুতে পরিমাপ করে নিই। তারপর সূর্যের আলোতে লম্বা করে দুইজন সেই লাঠিগুলো ধরে রাখি। লক্ষ করি যে, মাটিতে লাঠিগুলোর ছায়া পড়েছে। এবারে সেই ছায়ার দৈর্ঘ্য মেপে নিই। লাঠির উপরের প্রান্ত এবং ছায়ার শেষ প্রান্ত বরাবর সুতা টানটান করে ধরি। তারপর দুইটি লাঠির জন্য সুতার দৈর্ঘ্যও মেপে নিই।

এবারে লাঠির দৈর্ঘ্য, ছায়ার দৈর্ঘ্য এবং সুতার দৈর্ঘ্য দিয়ে নিচের ছকটি পূরণ করি।

 

লাঠির দৈর্ঘ্য

ছায়ার দৈর্ঘ্য

সুতার দৈর্ঘ্য

১।

 

 

 

২।

 

 

 

দৈর্ঘ্যের অনুপাত

 

 

 

তোমরা এখান থেকে বুঝতে পারছ যে ছায়ার অনুপাত সবসময় লাঠির অনুপাতের সমান হবে। অর্থাৎ আমরা যদি ছোট কোনো বস্তুর উচ্চতা এবং তার ছায়া পরিমাপ করতে পারি, তাহলে বড় বস্তুর ছায়া জেনে আমরা সেই বস্তুটির খাড়া অবস্থায় উচ্চতা বের করতে পারবো। জ্যামিতিক যে বৈশিষ্ট্যের জন্যে আমরা এটি করতে পারছি তার নাম হচ্ছে সদৃশতা।

কাজ: একটি জানা দৈর্ঘ্যের লাঠি নিয়ে তার ছায়া পরিমাপ করো। একই সময়ে তোমার বিদ্যালয়ের পতাকা  দণ্ডের ছায়া পরিমাপ করো। আমরা তো এখন জানি যে লাঠির অনুপাত ও ছায়ার অনুপাত সমান হবে। এই তথ্য ব্যবহার করে পতাকাদণ্ডের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করো।

আমাদের সবার কাছে জ্যামিতি বক্স আছে তাই না? বক্স থেকে নিচের আকৃতির ত্রিকোণীটি বের করব।

তোমরা একটি ত্রিকোণীর ভিতর দুইটি ত্রিভুজ দেখতে পাচ্ছো তাই না। ত্রিভুজ দুইটি দেখতে কী একই রকম? দেখতে এক রকম হলেও একটি বড় আর একটি ছোট। এবার জ্যামিতি বক্সের চাঁদার সাহায্যে ত্রিভুজ দুইটির কোণ মেপে নিচের ছকটি পূরণ করো:

ত্রিভুজের সাইজ

১ম কোণ

২য় কোণ

৩য় কোণ

বড়

 

 

 

ছোট

 

 

 

ছকটি পূরণ করার পর দেখতে পাবে আলাদা আলাদাভাবে বড় ত্রিভুজের তিনটি কোণ ছোট ত্রিভুজের অনুরূপ তিনটি কোণের সমান। তাহলে আমরা বলতে পারি, ত্রিভুজ দুইটি একই রকম দেখার কারণ দুইটি ত্রিভুজের তিনটি কোণ পরস্পর সমান।

একক কাজ:

বুলারের সাহায্যে ত্রিভুজ দুইটির বাহুগুলো পরিমাপ করে নিচের ছকটি পূরণ করো:

বড় ত্রিভুজের এক বাহুর দৈর্ঘ্য

ছোট ত্রিভুজের অনুরূপ বাহুর দৈর্ঘ্য 

বড় বাহুর দৈর্ঘ্য÷ছোট বাহুর দৈর্ঘ্য

ফলাফল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ছকের ফলাফল থেকে আমরা কী সিদ্ধান্তে আসতে পারি নিচে লিখি

 

 

 

 

 

আমরা দেখলাম যে দুইটি ত্রিভুজ সদৃশ হলে তাদের অনুরূপ কোণগুলো সমান হয় এবং তাদের অনুরূপ বাহুগুলো সমানুপাতিক হয়। বাহুগুলোর অনুপাত যদি ১ হয় তাহলে সদৃশ চিত্রগুলো সব দিক থেকেই সমান হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা সর্বসম হয়ে যায়। কাজেই আমরা বলতে পারি যে সর্বসমতা হচ্ছে সদৃশতার বিশেষ রূপ।

এবারে চলো আমরা দেখি সদৃশতা জানার জন্য কি আমাদের সব কয়টি কোণ এবং বাহুই জানা লাগবে নাকি অল্প কিছু জানলেই হবে। তিনটি দলে ভাগ হয়ে দলের প্রত্যেকে নিচের কাজগুলো করি চলো।

১ম দলঃ একটি ত্রিভুজ DEF আঁক, যার DE = 3cm DF = 4cm ও অন্তর্ভুক্ত কোণ EDF = 50°। আরেকটি ত্রিভুজ KLM আঁক যার KL = 6cm , KM = 8cm ও অন্তর্ভুক্ত কোণ LKM =50°।

ত্রিভুজের একইরকম বাহুগুলোর অনুপাত নাও এবং কোণগুলো পরিমাপ করে দেখো। ত্রিভুজ দুটো কি সদৃশ? আমরা এখান থেকে ত্রিভুজের সদৃশতার প্রথম শর্তটি পেয়ে যাচ্ছি। তা হচ্ছে

যদি একটি ত্রিভুজের তিন বাহু অপর একটি ত্রিভুজের তিন বাহুর সমানুপাতিক হয়, তাহলে ত্রিভুজ দুইটি সদৃশ হবে।

২য় দলঃ একটি ত্রিভুজ LMN আঁক, যার LM = 2cm, MN = 3cm এবং LN = 7cm। আরেকটি ত্রিভুজ XYZ আঁক যার XY = 6cm, YZ = 9cm, XZ = 7.5cm/

ত্রিভুজের একইরকম বাহুগুলোর অনুপাত নাও এবং কোণগুলো পরিমাপ করে দেখো। ত্রিভুজ দুটো কি সদৃশ? এবারে আমরা ত্রিভুজ সদৃশ হবার দ্বিতীয় শর্তটি বলতে পারি। সেটি হলও,

যদি একটি ত্রিভুজের দুই বাহু অপর একটি ত্রিভুজের দুই বাহুর সমানুপাতিক হয় এবং তাদের মধ্যেকার কোণগুলো যদি পরস্পর সমান হয়, তাহলে ত্রিভুজ দুইটি সদৃশ হবে।

৩য় দলঃ ABC ত্রিভুজটি আঁক যার কোণ BAC = 48°, কোণ ABC = 75°। এবার LMN ত্রিভুজটি আঁক, যার কোণ MLN = 48°, কোণ LMN = 75°1

ত্রিভুজের একইরকম বাহুগুলোর অনুপাত নাও এবং কোণগুলো পরিমাপ করে দেখো। ত্রিভুজ দুটো কি সদৃশ? তৃতীয় দলের ফলাফল থেকে আমরা সদৃশতার তৃতীয় শর্তে পৌঁছে যাচ্ছি, যেটি হলো:

যদি একটি ত্রিভুজের দুইটি কোণ অপর একটি ত্রিভুজের দুইটি কোণের সমান হয়, তাহলে ত্রিভুজ দুইটি সদৃশ হবে।

চারকাঠির খেলা

আমরা চারটি কাঠির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের চতুর্ভুজ তৈরি করবো এবারে।

ধাপ-১ চারটি কাঠিতে স্কেলের সাহায্যে ১সেমি পরপর দাগ দাও। কাঠি হিসেবে জুস খাবার লম্বা পাইপও ব্যবহার করতে পারো। (চিত্র-১ দ্রষ্টব্য)

চারটি কাঠির মাঝে দুইটির একপ্রান্ত কাপড় সেলাই করার সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে ছবির মতো করে যুক্ত করো। (চিত্র-২ দ্রষ্টব্য)

ধাপ ২ এরপর অপর একটি কাঠিকে ঐ কাঠি দুইটির যেকোনোও একটির সাথে সুতার সাহায্যে যুক্ত করতে হবে। (চিত্র-৩ দ্রষ্টব্য)

এবার শেষ কাঠিটিকে দুইপ্রান্তে একইভাবে এক প্রান্ত উন্মুক্ত কাঠির সাথে বাধতে হবে। (চিত্র-৪ দ্রষ্টব্য)

ধাপ ৩ এবারে আমরা চারটি কাঠি দিয়ে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি তৈরির খেলা খেলবো। খেলাগুলো এমন 

১। চারটি কাঠিকে সমান তিন দাগ পরপর রেখে যদি কাঠিগুলোর যেকোনোও একটিকে অন্যটির সাথে লম্বভাবে রেখে সকলে আকৃতিটি তুলে ধরো। সবকয়টি বাহু যেহেতু ৩ সেমি এবং কাঠিগুলোকে যেহেতু লম্বভাবে বসিয়েছি, এটি তাই একটি ৩ সেমি বাহু বিশিষ্ট বর্গ। আকৃতিটি খাতায় বসিয়ে বর্গটি আঁকো।

২। এইবার এই বর্গের যেকোনোও একটি বাহকে অন্য একটি বাহুর সাথে চাদার সাহায্যে ৬০ডিগ্রি কোণে রেখে তুলে ধরো। এটি ৬০ ডিগ্রি কোণ এবং ৩সেমি বাহু বিশিষ্ট একটি রম্বস। আকৃতিটি খাতায় বসিয়ে রম্বসটি আঁকো।

৩। একইভাবে ৩সেমি ও ৪ সেমি বাহুবিশিষ্ট একটি আয়ত বানিয়ে ক্লাসে তুলে ধরে শিক্ষককে দেখাও। আকৃতিটি খাতায় বসিয়ে আয়তটি আঁকো।

৪। একইভাবে এবার ৩ সেমি ও ৪ সেমি বাহু এবং ৬০ডিগ্রি কোণ বিশিষ্ট একটি সামান্তরিক বানাও। সেটি তুলে ধরে দেখিয়ে তারপর খাতায় এঁকে নাও।

চারটি বাহু এবং একটি কোণ দেয়া থাকলে আমরা একটি নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ আঁকতে পারছি আমরা।

অনুরূপ বাহুগুলোর অনুপাত এবং অনুরূপ কোণগুলো সমান হলে যেমন আমরা দুইটি ত্রিভুজকে সদৃশ বলেছি, একইভাবে দুইটি চতুর্ভুজ সদৃশ হবার জন্য অনুরূপ কোণগুলো সমান এবং অনুরূপ বাহুগুলো সমানুপাতিক হতে হবে।

তবে দুইটি চতুর্ভুজের সদৃশতা যাচাই করতে আমাদের সব কয়টি বাহু এবং কোণ পরিমাপ করতে হবে না। আমরা যেহেতু চারটি বাহু এবং একটি কোণ দেয়া থাকলেই একটি নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ আঁকতে পেরেছি তেমনভাবে চারটি অনুরূপ বাহুর অনুপাত সমান হলে এবং একটি কোণ দেয়া থাকলে বাকি কোণগুলোও সমান হবার কথা। চলো আমরা এমন দুইটি চতুর্ভুজ এঁকে তা যাচাই করে দেখি।

দলগত কাজ: ৩-৪ জনের দল গঠন করে নিচের কাজটি করো।

ধাপ ১। চার কাঠির যন্ত্রের সাহায্যে ABCD চতুর্ভুজ তৈরি করে খাতায় আঁক যেখানে কোণ A = ৫০°, AB = ৩ সেমি, BC = ৩.৫ সেমি, CD = ২ সেমি, AD = ২.৫ সেমি।

ধাপ ২। উপরে বর্ণিত উপায়ে আরও একটি চতুর্ভুজ EFGH আঁকো যেখানে কোণ E = ৫০°, EF = ৬ সেমি, FG = ৭ সেমি, GH = ৪ সেমি, EH = ৫ সেমি।

ধাপ ৩। বাকি কোণগুলো পরিমাপ করে দেখো, অনুরূপ কোণগুলো কি সমান হচ্ছে?

ধাপ ৪। তাদের চিত্র দেখে তুমি কি তাদেরকে সদৃশ বলতে পারো?

আমরা বলতে পারি যে দুইটি চতুর্ভুজের অনুরূপ বাহুগুলো সমানুপাতিক এবং একটি অনুরূপ কোণ সমান হলে চতুর্ভুজ দুইটি সদৃশ।

একক কাজ:

১। চিত্রে ABC একটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ যার AB=AC। w চিহ্নিত কোণের পরিমাপ কত হবে?

২। চিত্রে ABC একটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ যার AB=AC।

y চিহ্নিত কোণের পরিমাপ কত হবে?

৩। প্রদত্ত চিত্রে AB ও DE পরস্পর সমান্তরাল। চিত্রে বর্ণিত তথ্য ব্যবহার করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

(ক) কোণ ADE এর মান কত? 

(খ) চিত্রে দুইটি সদৃশ ত্রিভুজ আছে, তাদেরকে খুঁজে বের করো। কেন তারা সদৃশ হবে? 

(গ) সদৃশ ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে DE এর দৈর্ঘ্য বের করো।

 

Content added By
Promotion